বই রিভিউ | আফ্রিকী দুলহান
বই রিভিউ : আফ্রিকী দুলহান
লেখক: মাহমূদুর রহমান।প্রকাশক: ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বাংলাদেশ।
১।
উপন্যাসটিতে দুই ধরণের ফ্লেবার আছে। একটা হলো রোমান্টিক কাহিনী আর আরেকট হলো যুদ্ধের কাহিনি। এক মুসলিম দম্পতির নাম সরওয়ার-সালমা, আরেক মুসলিম দম্পতির নাম আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের-হেলেন। মুসলমানদের আফ্রিকা বিজয়ের কাহিনি সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে সুন্দর রচনাকৌশল আর শব্দচয়নের মাধ্যমে।
২।
সারওয়ার-সালমার বিয়ের দিনই খবর আসে যুদ্ধে যাবার। পরমা সুন্দরী সালমা সাথে বাসরঘরের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে সারওয়ার যোগ দেন যুদ্ধে।যুদ্ধের সময় সালমাও যান মুসলিম বাহিনীর সাথে।সেরাপর্দা দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে সারওয়ারের উপর। এরই ফাঁকে মাঝেমাঝে সালমার সাথে দেখা হয় সারওয়ারের।সারওয়ারের নিজের বিবাহিত স্ত্রী হওয়া স্বত্তেও সালমা সারওয়ারের সাথে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন, কারন এই অবস্থায় তাঁদেরকে কেউ দেখে ফেললে হয়তো উল্টোপাল্টা ভাববে। সালমা আর সরওয়ারের কথোপকথন লেখক বিভিন্ন অলংকারের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
আফ্রিকী দুলহান |
৩।
বইয়ের আরেক কাহিনী হলো হেলেনের সৌন্দর্যের। আফ্রিকার রাজা জর্জীরের মেয়ে হেলেন এতটাই সুন্দরী ছিলেন যে হেলেন যখন রাস্তা দিয়ে যেতেন দুপাশে অজস্র যুবক-বৃদ্ধা হেলেনকে দেখার জন্য রাস্তার পাশে লাইনবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যখন আফ্রিকার যোদ্ধারা মনোবল পাচ্ছেনা তখন রাজা জর্জীর ঘোষণা করেন যে,যে মুসলমানদের সর্দারের মাথা কেটে আনতে পারবে তার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।
রাজার এ ঘোষণা শুনে সব আফ্রিকার সৈন্য হেলেনকে পাবার আশায় যুদ্ধে যোগদান করে।
অপরদিকে মুসলাম সেনাপতি ঘোষণা দেন,যে জর্জীরের মাথা কেটে আনতে পারবে তাকে জর্জীরের কন্যার সাথে বিয়ে দেওয়া হবে (যদি সে রাজী থাকে)।
৪।
মুসলমানরা যুদ্ধের পূর্বে জর্জীরের কাছে সন্ধির আহ্বান করেন ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী।কিন্ত জর্জীর হেসেখেলে মুসলমানদের এই আহ্বান উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমার লক্ষাধিক সৈন্যসামন্ত নিয়ে তোমাদের সন্ধি মেনে নেওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। (যদিও যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে জর্জীরের উপলব্ধি হয়েছে সন্ধী করলেই ভালো হতো)।
শেষে যুদ্ধের মধ্যেই জর্জীরের মাথা কেটে আনেন মুসলিম বীর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের।
৫।
বইয়ের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইয়ের সৈন্য দলের মাঝখানে ঢুকে জর্জীরের মাথা কেটে আনেন তখন জর্জীরের মেয়ে তাকে দেখে ফেলে।আর কোনো মুসলিম এই দৃশ্য দেখেনি।
শেষে যুদ্ধবিজয়ের পর যখন সবাই খুঁজতে শুরু করলো কে হত্যা করলো জর্জীরকে সে যেনো জর্জীরের মেয়েকে পুরস্কার হিসেবে নিতে আসে। ঘোষণা শোনার পর যুবায়ের (রা.) আত্মগোপন করেন এই ভেবে যে যদি সবাই ভাবে জর্জীরের সুন্দরী মেয়ের লোভে তিনি এই কাজটি করেছেন।
শেষে হেলেন নিজেই খোঁজে বের করেন তার পিতার হত্যাকারী যুবাইয়ের রা. কে।
মুসলমানদের অমায়িক ব্যবহার আর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইয়েররের চরিত্র গুণে হেলেন পিতার হত্যাকারী হওয়া স্বত্তেও যুবাইরকে ভালোবেসে ফেলেন।
বিদ্র: আমার পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর মধ্যে 'আফ্রিকী দুলহান' একটি।
-আরিফুল ইসলাম
Comments
Post a Comment