বই রিভিউ | একজন আলী কেনানের উত্থান পতন

বই রিভিউ  : একজন আলী কেনানের উত্থান পতন

লেখক: আহমদ ছফা

(বাংলাদেশের মাজার ব্যবসা)

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এক শ্রেণীর মানুষ মাজারকে ভিত্তি করে যে জমজমাট ব্যবসা করেছে, এই উপন্যাসে লেখক সেসব ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।

গল্পের প্রধান চরিত্র আলী কেনান তো একসময় চিৎকার করে বলে, আমার কাছে যতো টাকা আছে, শেখ মুজিবের ব্যাংকে ও এতো টাকা নাই!

এতো টাকা একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে পেলো, তার বিস্তর কাহিনী লেখক বর্ণনা করেছেন।

একজন আলী কেনানের উত্থান পতন
একজন আলী কেনানের উত্থান পতন

পূর্ব বাংলার গভর্নরকে সলিল সমাধি হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে আলী কেনান এবং তার তিন ভাই। সেই থেকে গভর্নরের খাস লোকে পরিণত হয় আলী কেনান। গভর্নর ও তাকে যথাযথ আদর-আপ্যায়ন করতেন, আলী কেনান গভর্নরের বাসভবনে থাকা শুরু করে। গভর্নরের সাথে দেখা কররা জন্য আলী কেনানের কাছ থেকে 'পাস' নিতে হতো। এরকম দাপট ছিলো আলী কেনানের।

একটা ভুলের জন্য সেই গভর্নর আলী কেনানকে গভর্নর হাউজ থেকে লাত্থি মেরে তাড়িয়ে দেন। ঐদিকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আলী কেনান তার এলাকায় একাই আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কিভাবে সে তার এলাকায় ফিরে যাবে সেটার ব্যাখ্যা লেখক এভাবে দিয়েছেন,

"আলী কেনান যে মায়ের পেটে ন' মাস ছিলো সেখানে যেমন ফিরে যেতে পারেনা, তেমনি পারেনা ভোলার তামাপুকুর গ্রামে ফিরে যেতে ।"

গভর্নর হাউজ থেকে বহিষ্কৃত হবার কয়েকদিন পর আলী কেনান ভিক্ষা শুরু করে। এটাকে অবশ্য ভিক্ষা বলা যায়না, চাঁদাবাজি বলা যায়।

ভিখিরিরা সাধারণত ভিক্ষাদাতাকে 'বাবা' বলে সম্ভোধন করে। কিন্ত আলী কেনান নিজেকে বাবা বলে সম্ভোধন করে বলে, "দে, তর বাপরে একটা ট্যাহা দে।"

বলার ভঙ্গিতে নেই অনুরোধ, আছে আদেশের ঝাঁজ।
এভাবে প্রথমদিনই সে তেরো টাকা সংগ্রহ করে ফেললো।

ভিক্ষাবৃত্তি শেষে কেনান আলী লাল সালুর একটা লুঙ্গি এবং একটা আজানুলম্বিত আলখাল্লা বানিয়ে মাজার ব্যবসা শুরু করে। একটা কুকুরছানাকে রঙ্গ মাখিয়ে, গলায় ঘন্টা লাগিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে চাঁদা চাওয়া শুরু করে। দোকানদাররাও টাকা দিতে মানা করেনা। কেনান আলী একটাকার কম টাকা নেয়না।

মাজারে প্রতি বৃহস্পতিবারে গান-বাজনা হয়। গানের আসরে কেবল নিম্নবিত্ত মানুষ নয়, আস্তে আস্তে উচ্চবিত্তের মানুষজন ও আসা শুরু করে।
লেখকের ভাষায়, গানের রস না থাকলে মাজারগুলো মরুভূমি হয়ে যেতো। সেখানে মানুষ যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই দেখা দিতো না।

অন্য ব্যবসায়ের মূলধন মারা যাওয়ার ঝুঁকি আছে, মাজার ব্যবসায় তা নেই। মাজারে মানুষ আসবে, কারণ সে দূর্বল অসহায় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

মাজারের পাশের রসগোল্লা, জিলিপি, আগরবাতি একই দ্রব্য কতবার যে বিক্রি হয় তার কোনো হিসবে নেই।

আলী কেনানের প্রভাভ প্রতিপত্তি এতোটাই বেড়ে যায় যে, ব্রিটিশ টেলিভিশনের কোনো এক চ্যানেল আলী কেনানকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি করে। এই সংবাদ যেদিন জানা গেল, আলী কেনানের গলার জড়ির মালাটি চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যে নিলাম হয়ে গেল।

এইরকম উত্থাপনের পর আলী কেনানের সব প্রভাব প্রতিপত্তি ধুপ করেই পতন হলো। সেই কাহিনী জানার জন্য হলেও বইটা পড়ুন, এই টুইস্টটা রেখে দিলাম।

পুনশ্চ : আমাদের সমাজে এখনো শত শত আলী কেনান আছে। এইসব আলী কেনানদের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করতে পারি জনসচেতনতার মাধ্যমে। আলী কেনানদের ভন্ডামী ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।

বই রিভিউ - আরিফুল ইসলাম

Comments

Popular posts from this blog

মেমোরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | মেমোরির সাতকাহন

বই রিভিউ | আফ্রিকী দুলহান