মেমোরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | মেমোরির সাতকাহন



কম্পিউটারের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মাঝে একটি হলো তথ্য বা ডাটা সংরক্ষন করা।স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে কম্পিউটারের যেসকল অংশ বা component এই তথ্য সংগ্রহের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে, তাদেরকেই কম্পিউটারের মেমোরি বলা হয়। কতটুকু তথ্য এই মেমোরিধারক বা memory device ধারন করতে পারবে তা নির্ভর করে মেমোরির ধারন ক্ষমতা বা capacity এর উপর। এসব তথ্যের উপর বিভিন্ন ধরনের গানিতিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে কম্পিউটার ফলাফল প্রদর্শন করে থাকে। এ কারনেই বিভিন্ন ধরনের যৌক্তিক (logical) এবং গানিতিক (mathematical) দক্ষতা এবং সে সাথে ধারন ক্ষমতা এর উপর লক্ষ্য রেখে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মেমোরি যাদের সকলের ধারন ক্ষমতা এবং দক্ষতা সমান নয়।শুধুমাত্র এ কারনেই তথ্য সংগ্রহের জন্য এবং সেই তথ্যের  প্রক্রিয়াজাতকরন (processing) এর জন্য ব্যবহৃত হয় ভিন্ন ভিন্ন মেমোরি । তথ্যের সংরক্ষন  ও প্রক্রিয়াকরনের জন্য মেমোরি অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট স্থান থাকে স্থান গুলোকে সনাক্ত করার জন্য ব্যবস্থাও থাকে যাকে মেমোরি এড্রেস বলা হয়। মেমোরির প্রতিটি স্থানকে মেমোরি সেল বলে। মেমোরি সেল একটি বিট (০ বা ১) সংরক্ষণ করা যায়।
memory

মেমোরির প্রয়োজনীয়তা:


কম্পিউটার একটি তথ্যের পর অন্য আরেকটি তথ্যকে প্রক্রিয়াকরন বা প্রসেস করে থাকে। তাই প্রতিটি নির্দেশ ( instruction) এবং তথ্যকে প্রথমে একটি মেমোরিতে রেখে তথ্যগুলোকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে প্রক্রিয়াকরন করা প্রয়োজন । এজন্য নিম্নোক্ত কারনে মেমোরির প্রয়োজন রয়েছে :
প্রকিয়াকরনের সময় কর্ম পরিকল্পনা (program) এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য।
প্রোগ্রামের পুনঃব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামকে সংগ্রহের জন্য।
তথ্যকে সংরক্ষন করে তা ভবিষ্যতে ব্যবহার করার জন্য।
প্রক্রিয়াজাত করার পর তার ফলাফল সংগ্রহ করার জন্য।

মেমোরি সংক্রান্ত বিষয়াদি:

মেমোরি সন্বন্ধে জানার আগে মেমোরি সংক্রান্ত নিম্নবর্ণিত কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারনা রাখা দরকার :
মেমোরি সেল
একটি বিট (০ অথবা ১) সংরক্ষনের জন্য যে যন্ত্রাংশ বা সার্কিট ব্যবহার করা হয়, কম্পিউটারের ভাষায় তাকে মেমোরি সেল বলা হয়। এর উদাহরণস্বরুপ বলা যায়-ফ্লিপ-ফ্লপ (flip-flop), চার্জড ক্যাপাসিটির কিংবা চৌম্বক ডিস্ক বা টেপ এর উপর একটি বিন্দু।

মেমোরি এড্রেস:

প্রত্যেক মেমোরি সেলের একটি নির্দিস্ট এড্রেস থাকে যার সাহায্যে ঐ সেলকে চিহ্নিত করা বা খুজে বের করা যায়।
অনুরূপ ভাবে প্রত্যেক শব্দ বা রেজিস্টারের একটি বিশেষ নাম্বার থাকে যার দ্বারা সে শব্দ বা রেজিস্টারের অবস্থান জানা যায় তাকে এড্রেস বলে। পোস্ট কোড দ্বারা যেমন পোস্ট অফিস জানা যায় এড্রেস দ্বারা তেমনি রেজিস্টার বা শব্দকে চিহ্নিত করা যায়।
মাইক্রোকম্পিউটারে প্রত্যেক বর্ণের (যেমন  A,T,9 ইত্যাদি) জন্য একটি পৃথক এড্রেস থাকে। এ ধরনের কম্পিউটারকে বলা হয়  বর্ণ এড্রেসযুক্ত ( character addressable) এবং এদের শব্দ দৈর্ঘ্যকে বলা হয় পরিবর্তনশীল শব্দ দৈর্ঘ্য । বেশিরভাগ কম্পিউটারে একটি এড্রেসে একাধিক কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বর্ণ থাকে। এরা হল শব্দ এড্রেসযুক্ত  আর এদের শব্দ দৈর্ঘ্যকে বলা হয় নির্দিষ্ট শব্দ দৈর্ঘ্য (Fixed word length) ।
এড্রেস রেজিস্টারে n- টি বিট থাকলে তার সাহায্যে  2n টি এড্রেস রাখা যায়। এড্রেস রেজিস্টার সাধারণত  10  টি বিট ( 2^10 =1024  টি এড্রেস) থেকে  20  টি বিট ( 2^20=1048576  টি এড্রেস) থাকে।
কম্পিউটারে দুধরনের মেমোরি রয়েছে । যেমন- (১) প্রধান স্মৃতি (main memory) এবং (২) সহায়ক স্মৃতি ( Auxiliary memory).

মেমোরি ওয়ার্ড

নির্দিস্ট ধরনের তথ্য উপস্থাপনের জন্য  কতগুলো বিট এর সমষ্টিকে বলা হয় মেমোরি ওয়ার্ড। উদাহরনসরুপ  বলা যায় আইটি ফ্লিপ-ফ্লপ এর সমন্বয় গঠিত একটি রেজিস্টার ৮ বিটের একটি ওয়ার্ড ধারণে সক্ষম।

বিট( BIT)

ইংরেজি বাইনারি ডিজিটকে ( Binary Digit) সংক্ষেপে বিট ( Bit) বলা হয়। বাইনারি গণনা পদ্ধাতির ০ এবং ১ শব্দ দুটিকে এক একটি বিট বলা হয়।

বাইট ( BYTE)

পরপর সংলগ্ন আটটি বিট-এর সমষ্টিকে বাইট (byte) বলা হয়। বর্ণ,অংক্ক ও বিশেষ চিহ্ন নির্দিষ্ট করারা জন্য বাইট ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারের স্পেস হিসেব করার জন্য বাইটকেই একক হিসেবে ধরা হয়। অধিকাংশ কম্পিউটারে মেমোরি এক একটি ঘর বা এক একটি cell  ৮ টি বিট বা ১ বাইট  দিয়ে তৈরি, যা একটি ক্যারেক্টার বা অক্ষর সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট । ৪টি বিটকে একত্রে একটি  Nibble বলা হয়। কখনও কখনও ৪টি বাইট বা ৮টি বাইট মিলে এক একটি শব্দ তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এক একটি শব্দের দৈর্ঘ হয় ৩২ বিট বা ৬৪ বিট

ধারন ক্ষমতা বা ক্যাপাসিটি ( capacity)

একটি মেমোরি  সম্পূর্ণ মেমোরি সিস্টেম এ যতগুলো বিট সংরক্ষণ করা যায় তাই ধারন ক্ষমতাম উদাহরণসরুপ ধরা যাক একটি মেমোরি ২০ বিট-এর ৪০৯৬টি ওয়ার্ড ধারন করতে সক্ষম। এর অর্থ ধারনক্ষমতা ৮১৯২০ বিট। এই মেমোরি ধারন ক্ষমতাকে অন্যভাবে ৪০৯৬ x  ২০ আকারে প্রকাশ করা হয়। এভাবে প্রকাশ করা হলে প্রথম সংখ্যাটি (৪০৯৬) দাঁড়ায় ওয়ার্ডের সংখ্যা এবং দ্বিতীয় সংখ্যাটি (২০) দাঁড়ায় প্রতি ওয়ার্ডের বিট এর সংখ্যা  (bits per word) । মেমোরিতে ওয়ার্ডের সংখ্যাকে অনেক সময় ১০২৪ এর গুনিতিক হিসেবে প্রকাশ করা হয়। মেমোরির ধারন ক্ষমতা প্রকাশের সময় ১০২৪=২^১০ কে  "IK" দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এভাবে ৪০৯৬x২০ ধারনক্ষমতা সম্পন্ন মেমোরিকে  4k x 20 হিসেবেও প্রকাশ করা যায়।

মেমোরির ধারন ক্ষমতার সম্পর্ক

মেমোরি ক্যাপাসিটি

১ বাইট = ৮ বিট বা ২^১০ বাইট,
১ কিলোবাইট = ১০২৪ বাইট বা ২^১০ বাইট,
১ মেগাবাইট = ১০২৪ কিলোবাইট বা ২^২০ বাইট,
১ গিগাবাইট = ১০২৪ মেগাবাইট বা ২^৩০ বাইট,
১ টেরাবাইট = ১০২৪ গিগাবাইট বা ২^৪০ বাইট।

উদাহরণ ঃ একটি মেমোরির ধারন ক্ষমতা  2k x  8 এতে কতগুলো ওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যাবে? প্রতিটি ওয়ার্ড এর দৈর্ঘ্য বা word size কত? মেমোরি টি সর্বমোট কতগুলো বিট ধারণে সক্ষম?
সমাধানঃ এখানে  2k= 2x1024= 2048  টি ওয়ার্ড সংরক্ষণ সম্ভব। প্রতিটি ওয়ার্ডের দৈর্ঘ্য ৮ বিট বা ১  বাইট।
অতএব, সর্বমোট বিট এর সংখ্যা ২০৪৮ x  ৮ = ১৬৩৮৪ টি। (উত্তর)

উদাহরণ ঃ একটি মেমোরির ধারনক্ষমতা  8K x  16 । প্রতিটি ওয়ার্ডে কতগুলো বিট রয়েছে? কতগুলো ওয়ার্ড এতে সংরক্ষণ করা সম্ভব । কতগুলো মেমোরিকোষ বা memory cell এতে রয়েছে?
সমাধান ঃ প্রতিটি ওয়ার্ডের বিটের সংখ্যা  16
এখানে  8K= 8 x 1024 = 8164
অতএব,  8168  টি ওয়ার্ড এখানে সংরক্ষণ করা সম্ভব ।
সর্বমোট মেমোরিকোষ বা memory cell এর সংখ্যা  8168x16= 130688

Comments

Popular posts from this blog

বই রিভিউ | আফ্রিকী দুলহান