সেরা বই রিভিউ | তিনিই আমার রব
এক.
আমার এক কাজিন আছে, ইন্টারে পড়ে। এতো বড় হলেও বাচ্চামী স্বভাবগুলো তার এখনো যায় নি। বাচ্চাদের সাথে কার্টুন দেখতে বসলে দু-তিন ঘন্টা একটানা কার্টুন দেখতে পারে।
তিন-চার মাস আগে পড়ার জন্য দুটো বই নিয়ে যায়। সেদিন জিজ্ঞেস করলাম, "বইগুলো পড়েছো?"
না, বইগুলো পড়ার তার সময় হয়নি!
নানাবাড়ি গেলে তার সাথেই বেশিরভাগ সময় থাকি। একদিন এশার নামাজ পড়ে আমার স্টাডি রুমে একটা বই পড়তে বসছি। কিছুক্ষণ পর সে আসে। কথা বলার পর তার হাতে একটা বই দিয়ে বললাম, এটা পড়ো।
বইটা তাকে দিয়ে আমি আমার মতো করে আরেকটি বই পড়া শুরু করি। ঘন্টা দেড়েক পর যখন রাতের খাবারের জন্য ডাকা হলো, তখন তাকিয়ে দেখি সে এখনো আমার সামনে বসে আছি (সাড়াশব্দ না শুনে আমি ভাবছিলাম হয়তো চলে গেছে)।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি এখনো বসে আছো, বই পড়ছো?" হাসি বিনিময় করে সে বললো, হ্যাঁ।
জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগলো? বইটা উল্টিয়ে আমাকে বুঝালো, এক বসায় বইটার অর্ধেকের বেশি পড়েছি, এখন বুঝে নাও কেমন লাগছে।
যে ছেলেটা দুই-তিন মাসে দুটো বই পড়ার সময় পায়নি (!) সে এক দফায় যে বইটির অর্ধেক পড়া শেষ করে সেই বইটি হলো- তিনিই আমার রব।
দুই.
তিনিই আমার রব- বইটি এক বসায় পড়ার মতো হলেও আমি এক বসায় পড়তে পারি নি। বইয়ের এমন কিছু লাইন আছে, যেগুলো পড়ার পর ভালোমতো চিন্তা করার জন্য কিছু সময় দরকার ছিলো।
বইটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ১০ টি গুণবাচক নামের মর্মার্থ নিয়ে লিখা। লেখক কুর'আন-হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
আল্লাহকে চেনার, আল্লাহ সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটা পাঠকের সামনে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
লেখকের মতে- আল্লাহর নামগুলো না জানলে তো আমরা মরুভূমিতে পথহারা লোকের মতো হয়ে যাব। মরুভূমির গনগনে রোদে আমাদের দিনগুলো, আমাদের প্রাত্যহিক 'আমলগুলো ঝলসে যাবে। ফলে অন্তরে সারাক্ষণ বিরাজ করবে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। তাই, আসুন, সবচেয়ে আপনজন হিসেবে আল্লাহকে বেছে নেই।
তিন.
অনুবাদকের কিছু অনুবাদের সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। তাঁর ফেসবুক ওয়ালে বেশিরভাগ লেখাগুলোই অনুবাদ। অনুবাদকের অনুবাদ পড়ে প্রায় সময়ই মনে হয়, এতো 'মিষ্টি' করে কিভাবে অনুবাদ করা যায়? তা-ও আবার পরিমিত পরিমাণ মিষ্টি!
এই বইতে অনুবাদক তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মৌলিক বই আর অনুদিত বইয়ের পার্থক্য এখন অনেকটা কমে আসছে। এই বইটা পড়ার সময়ও মনে হয়নি, কোনো অনুদিত বই পড়ছি।
কিছু কথা আছে যেগুলো শুনলে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়, কিছু লেখা আছে যেগুলো পড়লে মনে হয় লেখাটি অন্তরে তীরবিদ্ধ করলো। হৃদয় আন্দোলিত করার মতো বেশ কিছু লাইন এই বইতে আছে। চিরন্তন অভ্যাসানুযায়ী পছন্দের লাইনগুলো নোট করতে গেলে তো দেখা যাবে মোটামুটি অর্ধেক বই নোট করতে হবে!
এই বই পড়ে এমন কিছু লাইন পেয়েছি যেগুলো চিন্তার সাগরে নতুন ঢেউ তুলেছে। এরকম কয়েকটি লাইন হলোঃ
♦ মহান রক্ষক তো তিনিই, যার দেওয়া কান দিয়ে আপনি হারাম শোনেন। অথচ মুহূর্তের মধ্যে তা অক্ষম করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে তা ব্যবহার করার সুযোগ দেন।
মহান রক্ষক তো তিনিই, যার দেওয়া চোখ দিয়ে আপনি হারাম দেখেন। অথচ ক্ষণিকের মধ্যে তাঁর দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে তা ব্যবহার করার সুযোগ দেন।
♦ আপনার অসম্ভব স্বপ্নগুলো বাস্তবের রূপ নেবে যদি আপনি 'সূক্ষ্মদর্শী' আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়েন।
♦ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ধৈর্যের মাধ্যমে সুস্থতা দেন। দু'আর মাধ্যমে দেন। সাদকার মাধ্যমেও দেন। ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমেও দেন। তাওবার মাধ্যমেও দেন। আবার সন্তুষ্ট হয়েও সুস্থতা দেন। সবশেষে কোনো মাধ্যম ছাড়াও আরোগ্য দেন।
♦ আপনার ঘরে একটা নতুন হাসপাতাল গড়ে তুলুন। সে হাসপাতালের নাম হোক 'জায়নামায'। সিজদার জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন। কারও অসুস্থতায় নিয়মিত এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সময় ব্যয় করুন অন্তরে একটা নাম জপতে থাকুন- আশ-শাফী।
♦ আপনি যখন দরজা বন্ধ করে তাঁর অবাধ্যতা করতে যান তখন তিনি দরজার নিচ দিয়ে অক্সিজেন প্রবেশ করিয়ে দেন যেন আপনি মরে না যান।
বই রিভিউ: তিনিই আমার রব।
লেখক: শাইখ আলী জাবের আল ফীফী (হাফিজাহুল্লাহ)।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ মজুমদার।
প্রকাশনী: সমকালীন প্রকাশন।
পৃষ্ঠা: ১৬৮।
প্রচ্ছদমূল্য: ২৩৫ টাকা।
-আরিফুল ইসলাম
আমার এক কাজিন আছে, ইন্টারে পড়ে। এতো বড় হলেও বাচ্চামী স্বভাবগুলো তার এখনো যায় নি। বাচ্চাদের সাথে কার্টুন দেখতে বসলে দু-তিন ঘন্টা একটানা কার্টুন দেখতে পারে।
তিন-চার মাস আগে পড়ার জন্য দুটো বই নিয়ে যায়। সেদিন জিজ্ঞেস করলাম, "বইগুলো পড়েছো?"
না, বইগুলো পড়ার তার সময় হয়নি!
নানাবাড়ি গেলে তার সাথেই বেশিরভাগ সময় থাকি। একদিন এশার নামাজ পড়ে আমার স্টাডি রুমে একটা বই পড়তে বসছি। কিছুক্ষণ পর সে আসে। কথা বলার পর তার হাতে একটা বই দিয়ে বললাম, এটা পড়ো।
বইটা তাকে দিয়ে আমি আমার মতো করে আরেকটি বই পড়া শুরু করি। ঘন্টা দেড়েক পর যখন রাতের খাবারের জন্য ডাকা হলো, তখন তাকিয়ে দেখি সে এখনো আমার সামনে বসে আছি (সাড়াশব্দ না শুনে আমি ভাবছিলাম হয়তো চলে গেছে)।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি এখনো বসে আছো, বই পড়ছো?" হাসি বিনিময় করে সে বললো, হ্যাঁ।
জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগলো? বইটা উল্টিয়ে আমাকে বুঝালো, এক বসায় বইটার অর্ধেকের বেশি পড়েছি, এখন বুঝে নাও কেমন লাগছে।
যে ছেলেটা দুই-তিন মাসে দুটো বই পড়ার সময় পায়নি (!) সে এক দফায় যে বইটির অর্ধেক পড়া শেষ করে সেই বইটি হলো- তিনিই আমার রব।
তিনিই আমার রব |
দুই.
তিনিই আমার রব- বইটি এক বসায় পড়ার মতো হলেও আমি এক বসায় পড়তে পারি নি। বইয়ের এমন কিছু লাইন আছে, যেগুলো পড়ার পর ভালোমতো চিন্তা করার জন্য কিছু সময় দরকার ছিলো।
বইটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ১০ টি গুণবাচক নামের মর্মার্থ নিয়ে লিখা। লেখক কুর'আন-হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
আল্লাহকে চেনার, আল্লাহ সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটা পাঠকের সামনে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
লেখকের মতে- আল্লাহর নামগুলো না জানলে তো আমরা মরুভূমিতে পথহারা লোকের মতো হয়ে যাব। মরুভূমির গনগনে রোদে আমাদের দিনগুলো, আমাদের প্রাত্যহিক 'আমলগুলো ঝলসে যাবে। ফলে অন্তরে সারাক্ষণ বিরাজ করবে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। তাই, আসুন, সবচেয়ে আপনজন হিসেবে আল্লাহকে বেছে নেই।
তিন.
অনুবাদকের কিছু অনুবাদের সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। তাঁর ফেসবুক ওয়ালে বেশিরভাগ লেখাগুলোই অনুবাদ। অনুবাদকের অনুবাদ পড়ে প্রায় সময়ই মনে হয়, এতো 'মিষ্টি' করে কিভাবে অনুবাদ করা যায়? তা-ও আবার পরিমিত পরিমাণ মিষ্টি!
এই বইতে অনুবাদক তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মৌলিক বই আর অনুদিত বইয়ের পার্থক্য এখন অনেকটা কমে আসছে। এই বইটা পড়ার সময়ও মনে হয়নি, কোনো অনুদিত বই পড়ছি।
কিছু কথা আছে যেগুলো শুনলে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়, কিছু লেখা আছে যেগুলো পড়লে মনে হয় লেখাটি অন্তরে তীরবিদ্ধ করলো। হৃদয় আন্দোলিত করার মতো বেশ কিছু লাইন এই বইতে আছে। চিরন্তন অভ্যাসানুযায়ী পছন্দের লাইনগুলো নোট করতে গেলে তো দেখা যাবে মোটামুটি অর্ধেক বই নোট করতে হবে!
এই বই পড়ে এমন কিছু লাইন পেয়েছি যেগুলো চিন্তার সাগরে নতুন ঢেউ তুলেছে। এরকম কয়েকটি লাইন হলোঃ
♦ মহান রক্ষক তো তিনিই, যার দেওয়া কান দিয়ে আপনি হারাম শোনেন। অথচ মুহূর্তের মধ্যে তা অক্ষম করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে তা ব্যবহার করার সুযোগ দেন।
মহান রক্ষক তো তিনিই, যার দেওয়া চোখ দিয়ে আপনি হারাম দেখেন। অথচ ক্ষণিকের মধ্যে তাঁর দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে তা ব্যবহার করার সুযোগ দেন।
♦ আপনার অসম্ভব স্বপ্নগুলো বাস্তবের রূপ নেবে যদি আপনি 'সূক্ষ্মদর্শী' আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়েন।
♦ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ধৈর্যের মাধ্যমে সুস্থতা দেন। দু'আর মাধ্যমে দেন। সাদকার মাধ্যমেও দেন। ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমেও দেন। তাওবার মাধ্যমেও দেন। আবার সন্তুষ্ট হয়েও সুস্থতা দেন। সবশেষে কোনো মাধ্যম ছাড়াও আরোগ্য দেন।
♦ আপনার ঘরে একটা নতুন হাসপাতাল গড়ে তুলুন। সে হাসপাতালের নাম হোক 'জায়নামায'। সিজদার জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন। কারও অসুস্থতায় নিয়মিত এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সময় ব্যয় করুন অন্তরে একটা নাম জপতে থাকুন- আশ-শাফী।
♦ আপনি যখন দরজা বন্ধ করে তাঁর অবাধ্যতা করতে যান তখন তিনি দরজার নিচ দিয়ে অক্সিজেন প্রবেশ করিয়ে দেন যেন আপনি মরে না যান।
বই রিভিউ: তিনিই আমার রব।
লেখক: শাইখ আলী জাবের আল ফীফী (হাফিজাহুল্লাহ)।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ মজুমদার।
প্রকাশনী: সমকালীন প্রকাশন।
পৃষ্ঠা: ১৬৮।
প্রচ্ছদমূল্য: ২৩৫ টাকা।
-আরিফুল ইসলাম
Comments
Post a Comment