সেরা বই রিভিউ | বিয়ে
বই রিভিউ : বিয়ে
লেখিকা: রেহনুমা বিনত আনিস
বই পড়ার জন্য আমার প্রিয় জায়গা রেস্টুরেন্ট । ২১ তলার উপরে নিরবে নির্বিঘ্নে বই পড়া যায়, সাথে ইচ্ছামতো চা-কফি খাওয়া তো যায়ই। নিচ থেকে যানবাহনের কিছুটা টুংটাং আওয়াজ আসে, বই পড়তে ক্লান্তি লাগলে রেস্টুরেন্টের ছাদের উপর থেকে আলোয় জ্বলমল ঢাকা শহর দেখে অবসাদ মিলে। তাই বই পড়ার জন্য রেস্টুরেন্টই আমার প্রিয়।
তারউপর এই বইটা ক্লাসে গিয়ে, লাইব্রেরিতে নিয়ে কিংবা রুমে বসে যে পড়বো সেটাও করা সম্ভব হয়নি, একটু পর পর একেকজন বইয়ের কাভার আর নাম দেখে হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, "বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছো নাকি?"
কারো বিয়ের খবর শুনলেই প্রথমে মনে প্রশ্ন জাগে, 'কনে দেখতে কেমন?' কিংবা 'বর কি করে?'
অথচ বৈজ্ঞানিক-অবৈজ্ঞানিক সমস্ত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বৈবাহিক জীবনে সুখের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের ভূমিকা বড়জোর ছ'মাস থেকে একবছর। আর অনেক ধনী মানুষ মুহূর্তে সব হারিয়ে নিঃস হয়েছেন এমন উদাহরণ ও আছে।
অথচ ক্ষণস্থায়ী এই দুটো গুণ কিভাবে বিয়ের মতো একটা চিরস্থায়ী বন্ধনের মূল ক্রাইটেরিয়া হয়? যেখানে ছেলের চরিত্র, মেয়ের চরিত্র উপেক্ষা করে বাহ্যিক গুণগুলো প্রাধান্য লাভ করে এমন একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সম্পর্ক সম্পর্কে বলা হয়েছে 'পোশাকস্বরূপ'।
এমন অনেক সুন্দরী বউ আছে যার চাহিদা পূরণের জন্য স্বামীকে ঘুষ খেতে হয় আর এমন অনেক দাড়ি-টুপিওয়ালা স্বামীও আছেন যারা সুন্দরী স্ত্রীকে প্রদর্শনীর সামগ্রীতে পরিণত করে রাখেন । এটিকে কি ভালোবাসা বা পারিবারিক সম্প্রীতি বলা যায়?
অথচ অনেক দরিদ্র পরিবারেও দেখা যায় বড় মাছ এনে স্বামী-স্ত্রী মিলে গল্প করতে করতে কাটান, সেখানে 'প্রেমের উৎসব' বয়ে যায়।
কনের পিতা কন্যার বিয়ের দিন সবকিছু উজার করে কন্যাকে দিতে চান । সব ভালোবাসা যে বিয়ের দিনই দিয়ে দিতে হবে এমন তো কোনো কথা নাই । আর যে বরপক্ষ বিয়ের আগেই যৌতুক তথা 'উপহার সামগ্রী' চেয়ে কনের পিতাকে হেনস্তা করে ফেলে, বিয়ের পর সেই ঘরে মেয়ে কতোটাই বা সুখী হতে পারবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর কনের বাবাকে মেয়ে বিয়ে দেবার আগেই হিসেবে মিলাতে হবে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়তে পারে কিন্ত কন্যাকে একবার বিয়ে দিলে সেই চোর পালানোর পর বুদ্ধি আর কোনো কাজে আসবেনা ।
বিয়ের পর আমাদের দেশে একটা প্রচলিত অভ্যাস দেখা যায় স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর নাম জুড়ে দেওয়া কিংবা স্ত্রীর নামের আগে মিসেস বলে স্বামীর নাম লাগানো (যেমন :মিসেস রহমান) ।
অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো স্বামী হিসেবে পরিচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম এর স্ত্রীদের নামের সাথে কি এমন বলা হয় মিসেস আয়েশা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম ? বরং তাঁর নাম বিয়ের আগে পরে আয়েশা বিনতে আবু বকরই ছিলো ।
স্বামীর সাথে সম্পর্ক একটা শব্দ তিনবার উচ্চারণ করলে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্ত বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়না।
এই অনুচ্ছেদটি লেখিকা অনেক সুন্দর একটা শিরোনামে লিখেছেন, 'অনেক কিছু আসে যায়' ।
বইটির মোট অনুচ্ছেদ ২২ টি। প্রথম ৮ টি অনুচ্ছেদ লেখিকার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে, পরের ১৪ টি অনুচ্ছেদ বিয়ে নিয়ে কয়েকটি সুন্দর গল্প নিয়ে। অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখা অনুচ্ছেদগুলোর শিরোনামও চিত্তাকর্ষক । লেখিকার আগের একটা বই পড়েছিলাম 'নট ফর সেল' নামে। বইটার নাম যেমন চিত্তাকর্ষক বইয়ের শিরোনামও ছিলো চিত্তাকর্ষক (যেমন : আমার মা কেন বিশ্বসুন্দরী নয়?) । এই বইটার অনুচ্ছেদের শিরোনামগুলোও আমার ভালো লেগেছে ।
যেমন :
প্যাকেট না প্রোডাক্ট?
ভালো বর পেতে হলে
তুমি ছিলে গো মোর প্রার্থনায়
বিয়ে না হলে নাইবা হলো
অনেক কিছু আসে যায়
প্রতিটা ফোঁড়েই জীবন
প্রত্যুষের প্রত্যাশা।
শেষের দিকে গল্পগুলো স্রেফ গল্প নয়, আমাদের সমাজের বাস্তবতা । কখনো বউ-শ্বাশুড়ির দা-কুমড়ো সম্পর্ক, কখনো আবার বউ-শ্বাশুড়ির মিষ্টি সম্পর্ক, বউমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলিয়ে রাখার সম্পর্ক, আবার কখনো স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে লেখিকা এখানে স্ত্রীর ভূমিকা কি হওয়া উচিত ছিলো সেটাও গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ।
কিছু বই আছে যেগুলো বিপ্লব আনতে পারে । বিয়ে বইটাও আশা করি বিপ্লব আনবে । বিয়ে নিয়ে সমাজের কুসংস্কারগুলো দূর হবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া স্বত্তেও ছেলেদেরকে বিয়ে দিতে বাবা-মা দ্বিমত করবেনা, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনেও বস্তুকেন্দ্রীক মনোভাবের পরিবর্তন আসবে ।
সর্বোপরি সমাজের মধ্যে বিয়ে প্রথা যেরকম হওয়া উচিত সেরকম হওয়ার পথে বইটা পাথেয় হতে পারে এই আশা করি।
বই রিভিউ - আরিফুল ইসলাম
লেখিকা: রেহনুমা বিনত আনিস
বই পড়ার জন্য আমার প্রিয় জায়গা রেস্টুরেন্ট । ২১ তলার উপরে নিরবে নির্বিঘ্নে বই পড়া যায়, সাথে ইচ্ছামতো চা-কফি খাওয়া তো যায়ই। নিচ থেকে যানবাহনের কিছুটা টুংটাং আওয়াজ আসে, বই পড়তে ক্লান্তি লাগলে রেস্টুরেন্টের ছাদের উপর থেকে আলোয় জ্বলমল ঢাকা শহর দেখে অবসাদ মিলে। তাই বই পড়ার জন্য রেস্টুরেন্টই আমার প্রিয়।
বিয়ে |
তারউপর এই বইটা ক্লাসে গিয়ে, লাইব্রেরিতে নিয়ে কিংবা রুমে বসে যে পড়বো সেটাও করা সম্ভব হয়নি, একটু পর পর একেকজন বইয়ের কাভার আর নাম দেখে হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, "বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছো নাকি?"
কারো বিয়ের খবর শুনলেই প্রথমে মনে প্রশ্ন জাগে, 'কনে দেখতে কেমন?' কিংবা 'বর কি করে?'
অথচ বৈজ্ঞানিক-অবৈজ্ঞানিক সমস্ত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বৈবাহিক জীবনে সুখের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের ভূমিকা বড়জোর ছ'মাস থেকে একবছর। আর অনেক ধনী মানুষ মুহূর্তে সব হারিয়ে নিঃস হয়েছেন এমন উদাহরণ ও আছে।
অথচ ক্ষণস্থায়ী এই দুটো গুণ কিভাবে বিয়ের মতো একটা চিরস্থায়ী বন্ধনের মূল ক্রাইটেরিয়া হয়? যেখানে ছেলের চরিত্র, মেয়ের চরিত্র উপেক্ষা করে বাহ্যিক গুণগুলো প্রাধান্য লাভ করে এমন একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সম্পর্ক সম্পর্কে বলা হয়েছে 'পোশাকস্বরূপ'।
এমন অনেক সুন্দরী বউ আছে যার চাহিদা পূরণের জন্য স্বামীকে ঘুষ খেতে হয় আর এমন অনেক দাড়ি-টুপিওয়ালা স্বামীও আছেন যারা সুন্দরী স্ত্রীকে প্রদর্শনীর সামগ্রীতে পরিণত করে রাখেন । এটিকে কি ভালোবাসা বা পারিবারিক সম্প্রীতি বলা যায়?
অথচ অনেক দরিদ্র পরিবারেও দেখা যায় বড় মাছ এনে স্বামী-স্ত্রী মিলে গল্প করতে করতে কাটান, সেখানে 'প্রেমের উৎসব' বয়ে যায়।
কনের পিতা কন্যার বিয়ের দিন সবকিছু উজার করে কন্যাকে দিতে চান । সব ভালোবাসা যে বিয়ের দিনই দিয়ে দিতে হবে এমন তো কোনো কথা নাই । আর যে বরপক্ষ বিয়ের আগেই যৌতুক তথা 'উপহার সামগ্রী' চেয়ে কনের পিতাকে হেনস্তা করে ফেলে, বিয়ের পর সেই ঘরে মেয়ে কতোটাই বা সুখী হতে পারবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর কনের বাবাকে মেয়ে বিয়ে দেবার আগেই হিসেবে মিলাতে হবে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়তে পারে কিন্ত কন্যাকে একবার বিয়ে দিলে সেই চোর পালানোর পর বুদ্ধি আর কোনো কাজে আসবেনা ।
বিয়ের পর আমাদের দেশে একটা প্রচলিত অভ্যাস দেখা যায় স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর নাম জুড়ে দেওয়া কিংবা স্ত্রীর নামের আগে মিসেস বলে স্বামীর নাম লাগানো (যেমন :মিসেস রহমান) ।
অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো স্বামী হিসেবে পরিচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম এর স্ত্রীদের নামের সাথে কি এমন বলা হয় মিসেস আয়েশা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম ? বরং তাঁর নাম বিয়ের আগে পরে আয়েশা বিনতে আবু বকরই ছিলো ।
স্বামীর সাথে সম্পর্ক একটা শব্দ তিনবার উচ্চারণ করলে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্ত বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়না।
এই অনুচ্ছেদটি লেখিকা অনেক সুন্দর একটা শিরোনামে লিখেছেন, 'অনেক কিছু আসে যায়' ।
বইটির মোট অনুচ্ছেদ ২২ টি। প্রথম ৮ টি অনুচ্ছেদ লেখিকার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে, পরের ১৪ টি অনুচ্ছেদ বিয়ে নিয়ে কয়েকটি সুন্দর গল্প নিয়ে। অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখা অনুচ্ছেদগুলোর শিরোনামও চিত্তাকর্ষক । লেখিকার আগের একটা বই পড়েছিলাম 'নট ফর সেল' নামে। বইটার নাম যেমন চিত্তাকর্ষক বইয়ের শিরোনামও ছিলো চিত্তাকর্ষক (যেমন : আমার মা কেন বিশ্বসুন্দরী নয়?) । এই বইটার অনুচ্ছেদের শিরোনামগুলোও আমার ভালো লেগেছে ।
যেমন :
প্যাকেট না প্রোডাক্ট?
ভালো বর পেতে হলে
তুমি ছিলে গো মোর প্রার্থনায়
বিয়ে না হলে নাইবা হলো
অনেক কিছু আসে যায়
প্রতিটা ফোঁড়েই জীবন
প্রত্যুষের প্রত্যাশা।
শেষের দিকে গল্পগুলো স্রেফ গল্প নয়, আমাদের সমাজের বাস্তবতা । কখনো বউ-শ্বাশুড়ির দা-কুমড়ো সম্পর্ক, কখনো আবার বউ-শ্বাশুড়ির মিষ্টি সম্পর্ক, বউমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলিয়ে রাখার সম্পর্ক, আবার কখনো স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে লেখিকা এখানে স্ত্রীর ভূমিকা কি হওয়া উচিত ছিলো সেটাও গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ।
কিছু বই আছে যেগুলো বিপ্লব আনতে পারে । বিয়ে বইটাও আশা করি বিপ্লব আনবে । বিয়ে নিয়ে সমাজের কুসংস্কারগুলো দূর হবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া স্বত্তেও ছেলেদেরকে বিয়ে দিতে বাবা-মা দ্বিমত করবেনা, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনেও বস্তুকেন্দ্রীক মনোভাবের পরিবর্তন আসবে ।
সর্বোপরি সমাজের মধ্যে বিয়ে প্রথা যেরকম হওয়া উচিত সেরকম হওয়ার পথে বইটা পাথেয় হতে পারে এই আশা করি।
বই রিভিউ - আরিফুল ইসলাম
Comments
Post a Comment