বুক রিভিউ | পুষ্প বৃক্ষ এবং বৃহঙ্গ পুরাণ
বুক রিভিউ : পুষ্প বৃক্ষ এবং বৃহঙ্গ পুরাণ
লেখক: আহমদ ছফাআহমদ ছফার উপন্যাসগুলোতে দেখলাম ছফা সাহেবের ভূমিকা থাকে কথক হিসেবে,এই উপন্যাসটিও তার ব্যতিক্রম নয়। কথক আহমদ ছফা তার বাসা পরিবর্তন করে নতুন বাসায় উঠেন। বাসা পরিবর্তন করার সময় বাড়িওয়ালাকে ইম্প্রেস করার জন্য বিভিন্ন কায়দা অবলম্বন করেন।
নতুন বাড়িতে উঠার পর লেখকের পালক পুত্র সুশীল উনাকে একটা অর্ধমৃত তুলসী গাছ এবং একটা নয়নতারা গাছ দেখায় বাড়ির ছাদের উপর।লেখক আর সুশীল দুজনে মিলে যত্ন করে সেই অর্ধমৃত তুলসী আর নয়নতারা গাছ দুটিকে বাঁচিয়ে তুলেন।সেই থেকে লেখকের মনে বৃক্ষপ্রীতি জন্ম নিলো।
কয়েকদিন পর রাস্তায় হেটে যাওয়ার পথে একটা পিষ্ট বেগুনের চারা দেখতে পান লেখক।চারাটি মাটি থেকে তুলে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। পরেরদিন মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার সময় লেখক চারাটি দেখে অবাক হন।যে গাছ গতকাল মানুষের পদতলে পড়ে মারা যাচ্ছিলো সেই গাছটি কিনা পায়ের উপর দাড়িয়ে আছে,মনে হচ্ছে তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে!এতে লেখকের মনে বৃক্ষপ্রেম আরো বেড়ে গেল।
লেখক প্ল্যান করলেন ইন্টারন্যাশনাল হলের ভলিবল খেলার মাঠটা চাষাবাদ করবেন বিভিন্ন চারা বিশেষ করে বেগুনের চারা লাগিয়ে।
যেমনি কথা তেমনি কাজ!শুরু হয়ে গেল জমি খুঁড়া,তা ও লাঙ্গল দিয়ে নয় কোদাল দিয়ে।লেখক যখন কোদাল হাতে জমি খুঁড়তে শুরু করেন উৎসুক জনতা ভিড় জমালো লেখকের পাগলামি দেখতে।কেউ কেউ আবার নিজে এসে কোদাল হাতে নিয়ে মাটি খুঁড়া শুরু করে দিল।শুরু হয়ে গেল চাষাবাদ চাষাবাদ খেলা!মনের আনন্দে সবাই চাষাবাদ করছে।বেগুন,টমেটো আর বাঁধাকপির চারা লাগানো হলো।
লেখকের চাষাবাদ করার মজার গল্প শুনে আমার নিজের মন চাইলো জীবনে যদি চাষাবাদ না ই করলাম তাহলে জীবনের স্বার্থকতা কোথায়?
অবশেষে বেগুন বড় হল,টমেটো বড় হল।নিজ হাতে রোপণ করা চারাগুলো বড় হয়েছে দেখে লেখকের মন আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। এবার বুঝা গেল,কৃষকরা কেন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ফসল ফলায়।
ফসল দেখার আনন্দে তীব্র কষ্টগুলো তখন ম্লান হয়ে যায়।
তারইমাঝে লেখক বস্তীর শিশুদের নিয়ে একটি স্কুল খুলেন।জমির তরিতরকারি দিয়ে প্রথমদিন সেই শিশুদের খাওয়ানো হলো। লেখক বলেন, ঐ দিনের বাচ্চাদের হাসির খিলখিল শব্দ শুনে মনে হলো আজ আমার জীবন স্বার্থক।
চাষাবাদ আর বস্তীর শিশুদের পড়ানোকে লেখক এমনভাবে তুলে ধরেছেন, ক্ষনিকের জন্য নিজেকে ঐ বস্তীর শিশুদের অবস্থানে চিন্তা করে লেখকের পাঠশালায় পড়া আর কোদাল হাতে নিয়ে জমি খুঁড়ার চিন্তা করেও এক অদ্ভুত আনন্দ লাভ করা যায়।
লেখক এই চারাগাছগুলো ছাড়া একদিনও থাকতে পারেননা। মনে হতো এই চারাগাছগুলো লেখকের পরিবার।একবার ভারতে গিয়েছিলেন ১০ দিনের সফরে।৭ দিন ও সেখানে থাকা সম্ভব হলো না চারা গাছগুলোর চিন্তায়,তাই ৩ দিন আগেই দেশে ফিরে চারাগাছগুলোকে দেখে মনের তৃষ্ণা নিবারণ করেন তিনি।ছুটির সময় বাড়িতে গিয়েও থাকতে পারেন না গাছগুলোর চিন্তায়।
একসময় চিন্তা করেন উনার আর গাছগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে।এক বন্ধু আরেক বন্ধু ছাড়া থাকতে পারেনা।
গাছের পর্ব শেষে আসে পাখি পর্ব।একটা কাক লেখককে জীবনের শ্রেষ্ট শিক্ষা দিয়েছে।তাই কাকটাকে লেখক নিজের পুত্র ভাবা শুরু করেন।একসময় লেখকের মনে পাখিপ্রীতির উদ্ভব ঘটে। লেখক পাখিপালন শুরু করেন,নিজ হাতে পাখিকে খাওয়ানো, পাখির সাথে কথা বলা,পাখির কথা বোঝার চেষ্টা করা আরো কত কী!
পুনশ্চ : আমাদের চারপাশের প্রকৃতিটা কত সুন্দর,তাকে কত আপন করে নেওয়া যায় সেটা বুঝার জন্য হলেও অন্তত বইটা পড়া দরকার।
-আরিফুল ইসলাম
Comments
Post a Comment