সেরা বই রিভিউ | সংবিৎ

সেরা বই রিভিউ : সংবিৎ

লেখক: জাকারিয়া মাসুদ

ডাচ ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, 'Attack is the best form of defence'.
একদিন একটা লাইব্রেরিতে বসে সাথে ইসলাম বিদ্বেষীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব নিয়ে আলোচনা একজন আলেমের সাথে কথা বলছিলাম।
এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বললেন, সবসময় তাদের প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিতেই হবে এমন না, আমরাও মাঝে মাঝে তাদেরকে তাদের মতবাদ নিয়ে প্রশ্ন করবো, দেখবো তারা কি উত্তর দেয়।
শেষে তিনি ডাচ ভাষার এই প্রবাদটা বললেন।

সংবিৎ
সংবিৎ

প্যারাডক্সিকাল সাজিদ, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এমনকি আমার আর্গুমেন্টস অব আরজুতে ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, অর্থাৎ মূল কাজটা ছিলো 'ডিফেন্স' করা।

জাকারিয়া মাসুদ ভাইয়ের সংবিৎ বইয়ে কেবল আক্রমণের জবাব দেওয়া হয়নি, পাল্টা প্রশ্নও করা হয়েছে।

ফারিসের সাথে প্রথম পরিচিয় কয়েকমাস আগে, ফেসবুকে। ফেসবুকে ফারিসকে নিয়ে লিখা বেশকয়েকটি গল্প পড়ে ফারিস পড়ার আগ্রহ জাগছে। লেখককে রীতিমত বিরক্ত করতাম, 'ভাই, ফারিসকে মলাটবদ্ধ করবেন কবে?'
ফেসবুকে পড়া গল্পগুলোও বইয়ে আবার পড়লাম। মনে হচ্ছিলো যে নতুন গল্প পড়ছি। কারণ ফেসবুকে প্রকাশিত গল্পের আগের অংশে লেখক আরো নতুন কিছু যোগ করেছেন।

'ডারউনিজম : সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর' শিরোনামের গল্পে লেখক দেখিয়েছেন বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কিভাবে সারা পৃথিবীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে। দাসপ্রথা, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, শ্রেণী সংগ্রাম, লিঙ্গ বৈষম্য প্রভৃতি সামাজিক ও রাজনৈতিক অনাচার বিবর্তনবাদের ফলে বিজ্ঞানের নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে! এমনকি হিটলারের আগ্রাসী মনোভাবের পেছনে ডারউনিজম কিভাবে জড়িত সেটাও লেখক তুলে ধরেছেন রেফারেন্সসহ।

'কুম্ভিলক ও দণ্ডিত অপুরুষ' শিরোনামের গল্পে বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি (!) হুমায়ূন আজাদের চৌর্যবৃত্তির কথা লেখক সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। হুমায়ূন আজাদের 'তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান' এবং 'বাক্যতত্ত্ব' বই দুটি কিভাবে Jocobsen এর Transformational Generative Grammar, Introduction to Historical Linguistic, The Neogrammarians, The Dehumanization of Art বইগুলো থেকে হুবহু কপি করেছেন সেটা নিয়েও লেখক আলোচনা করেছেন।

এছাড়াও একই গল্পে হুমায়ূন আজাদের 'নারী' বইটির মিথ্যাচারও তুলে ধরেছেন ইসলাম বিদ্বেষীদের উদ্ধৃতি দ্বারা।

আমি একসময় হিমুর ভক্ত ছিলাম, হিমু হতে চাইতাম। হিমু চরিত্রের সবচেয়ে ভালো লাগতো যে জিনিসটা সেটা হিমুর ইন্টুইশন ক্ষমতা। সংবিৎ গল্পেও মোটামুটি হিমুর ফ্লেভার পেয়েছিলাম ফারিসের মধ্যে।
'স্বপ্নলোক' গল্পে ডিন স্যারের সাথে কথা বলার সময় ডিন স্যার যখন ফারিসকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর সম্পর্কে এমন কিছু বলতে যা তিনি তাকে বলেননি।

ফারিস চিন্তা করে বললো, স্যার আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন আর আপনার একটা মেয়েও আছে।

টেবিলে আঁকা একটা ফুল, ফুলটা স্যারের মেয়ে এঁকেছে আর ছবিটির নিচে লিখা 'অহনা'। তারমানে মেয়ের নাম অহনা, ছেলের নাম অর্ণবের সাথে মিল রেখে অহনা। একই গল্পের শেষের দিকটা আমার একটু বেশিই ভালো লাগছে। স্পর্শের প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকার কারণে ফারিস যখন দুশ্চিন্তা করছিলো তখন অনুষ্ঠান সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকা কথক একই উত্তর দিয়ে দেন, যদি (গল্পে) তিনি জানতেন না, ফারিস এই প্রশ্ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।

পুরো গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলেও গল্পের শেষ অনুচ্ছেদটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো! যারা পড়েছেন তারা বিষয়টা বুঝতে পারবেন।

বাংলার নিরীশ্বরবাদীদের প্রায় বেশিরভাগ প্রশ্নই খ্রিষ্টান মিশনারি থেকে ধার করা। তাই লেখক নিরীশ্বরবাদী এবং মিশনারি দুদিকেই নজর দিয়েছেন।
বইয়ের দুটো গল্পের একটিতে বাইবেলের পরস্পর বিপরীতমুখী আয়াত নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং একটিতে অজানা অধ্যায়ের সুসমাচার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ফারিস চরিত্রকে লেখক এমনভাবে সাজিয়েছেন, নায়ক চরিত্র হিসেবে ভালো লাগার মতো। কেবল যৌক্তিক, তথ্যবহুল কথার মধ্যেই ফারিস চরিত্র সীমাবদ্ধ নয়, সাথে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ফারিসকে ভালো লাগার মতো।

সময় জ্ঞান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ফারিস, পাশাপাশি ইবাদাত সম্পর্কেও (সকালের মর্নিং ওয়াক করার পাশাপাশি তাসবীহ পড়া)।
সমালোচনা :
১। বই খোলার সাথে সাথেই বইয়ের ফন্ট দেখে আমার কাছে যথেষ্ট ছোট মনে হয়েছে। ভাবলাম হয়তো নিজে এরকম ছোট ফন্টে পড়িনি, তাই ছোট মনে হচ্ছে। লেখককে বিষয়টি জানালে লেখক বললেন, বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ায় ছোট ফন্ট দেওয়া হয়েছে।

২। লেখক যেহেতু প্রতিপক্ষের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, সেহেতু প্রতিপক্ষ ডিফেন্স করার জন্যও কিছু পাল্টা প্রশ্ন বা ডিফেন্সিভ তথ্য দিতে পারতো। কিন্ত বইটির কয়েকটা গল্পে প্রতিপক্ষকে আমার কাছে যথেষ্ট দূর্বল মনে হয়েছে। ফাঁকা মাঠে গোল দেবার মতো। অনেক জায়গায় দেখলাম প্রতিপক্ষের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। সে ফারিসকে বলে, "দাদাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো!"

৩। এই সমালোচনাটা আর্গুমেন্টস অব আরজুর ক্ষেত্রেও অনেক স্বাস্থ্য সচেতন করেছেন। তবে সংবিৎ এ ফারিস আর কথকের চা কফি খাওয়াটা আমার কাছে মনে হয়েছে অত্যধিক পরিমাণে দেখানো হয়েছে। চায়ের দেশে থাকলে যা হয় আরকী! :-D

পরিশেষে গল্পের আংকেলের মতো বলতে চাই,
আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন ফারিসের মতো ছেলে ঘরে ঘরে তৈরি করেন।

বইটি প্রকাশ করেছে সমর্পণ প্রকাশন।
প্রচ্ছদমূল্য ৩০০ টাকা।

রিভিউ করেছেন আরিফুল ইসলাম।

Comments

Popular posts from this blog

মেমোরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | মেমোরির সাতকাহন

বই রিভিউ | আফ্রিকী দুলহান