ইসলামিক বই রিভিউ | তোমাকে ভালবাসি হে নবী!

ইসলামিক বই রিভিউ : তোমাকে ভালবাসি হে নবী!
লেখক: গুরুদত্ত সিং।

'রাসূলে আরাবী' নামে গুরুদত্ত সিং এর লিখা বইটি বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ।
মুহাম্মদ সা: এর জীবনী নিয়ে এতো ছোট বই এর আগে আমি পড়িনি। বইটির বিশেষত্ব কেবল সংক্ষিপ্তাকারে রাসূল সা: এর জীবনী লেখার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয় বরং লেখক কাব্যিক ভাষায় বইটি লিখেছেন। অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সা: এর প্রতি লেখকের প্রেম,আবেগ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।

খুব সংক্ষিপ্তাকারে রাসূল সা: এর দীর্ঘ ৬৩ বছরের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সংক্ষেপে যে উপমায় লেখক বর্ণনা করেছেন আর অনুবাদক যেভাবে অনুবাদ করেছেন, তা পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে 'ভালো লাগতে বাধ্য'। ধিক্কারের জায়গায় ধিক্কার, আবেগের জায়গায় আবেগময় বর্ণনা দিয়ে লেখক এমনভাবে বইটি উপস্থাপন করেছেন যে, বই পড়ার সময় বলা হয়ে থাকে তা হৃদয় স্পর্শকরে, আমার তেমনই বইটা হৃদয়স্পর্শ করেছে।
ইসলামিক বই রিভিউ
তোমাকে ভালবাসি হে নবী

বইটিতে বর্ণিত রাসূল সা: এর জীবনের কয়েকটি ঘটনা বইটা পড়ার সময় আমাকে আবারোও আলোড়িত করেছে:

১। রাসূল সা: আবু বকর রা: কে নিয়ে যখন হিজরত করেন তখন একটা গুহায় আশ্রয় নেন। প্রিয় নবী সা: যখন আবু বকর রা: এর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন তখন একটা বিষধর সাপ আবু বকর রা: এর আঙ্গুলে দংশন করলো। আবু বকর রা: যন্ত্রণায় অস্থির হলেন এবং বিষের প্রভাবে শরীর নিস্তেজ হলো, কিন্ত পা সরালেন না।
নবী সা: জাগ্রত হলে অবস্থা দেখে আবু বকর রা: কে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমাকে জাগালে না কেন?

আবু বকর রা: বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটবে, এর চেয়ে আমার মৃত্যু ভালো।
তখন রাসূল সা: দংশন স্থানে মুখের পবিত্র থুথু লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিষক্রিয়া সেরে গেলো এবং আবু বকর রা: সুস্থ হয়ে গেলেন।

২। মক্কার লোকেরা রাসূল সা: কে এমনভাবে নির্যাতন করেছিলো যে রাসূল সা: হিজরত করতে বাধ্য হন। মক্কা বিজয় করে রাসূল সা: এইসব অত্যাচারীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

তন্মধ্যে কিছু গুরুতর অপরাধী ছিলো। হাব্বার নামক জনৈক ব্যক্তি নবী সা: এর কন্যা হযরত যয়নব অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন তখন হাব্বার বর্শা নিক্ষেপ করে যয়নব রা: কে সাওয়ারির উপর থেকে ফেলে দেন। ফলে গর্ভপাত হয়ে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছিলো।

এই হাব্বার যখন রাসূল সা: এর কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করলো তখন রাসূল সা: সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কন্যাহত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন।

৩। কবি কা'আব বিন যোহায়র আল্লাহর রাসূলের নিন্দা করে জঘন্য কবিতা লিখতো। সেই কবিতা কুরাইশদের যেমন আনন্দ দিতো, তেমনি মুসলিমদের কলিজায় রক্ত ঝরাতো। সেই কা'আব বিন যোহায়র ও প্রিয় নবী সা: দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে রাসূল সা: তাকে ক্ষমা করেন।

৪। রাসূল সা: এর চাচা হামজা রা: কে হত্যা করার পর রাসূল সা: সবচেয়ে বেশি মনঃক্ষুণ্ণ হোন। এই হামজা রা: এর হত্যাকারী ওয়াহশী আল্লাহর রাসূলের সামনে উপস্থিত হলো তখন রাসূল সা: ওয়াহশীকেও ক্ষমা করে দেন।

৫। নবী সা: খাদিজা রা: এর মৃত্যুর অনেক পরে বিবি খাদিজার স্মৃতিচারণা করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। নারী হৃদয়ের স্বাভাবিক ঈর্শাবশত আয়িশা রা: বলে উঠলেন, "আল্লাহ কি আপনাকে ঐ দাঁতপড়া বুড়ীর (খাদিজা রা: কে ইঙ্গিত করে) চেয়ে উত্তম স্ত্রী দান করেননি?"

ব্যথিত স্বরে রাসূল সা: বলেন, "কঠিন দারিদ্রের সময় তিনি (খাদিজা রা:) আমার ঘরে এসেছেন এবং আমার জীবনে সুখ সচ্ছলতা এনেছেন। মক্কা যখন আমাকে অবিশ্বাস করেছে তখন আমাকে বিশ্বাস করেছেন তিনি। যখন গোটা আরব আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তিনি তখন পাহাড় বেয়ে হেরা গুহায় আমার খাবার নিয়ে গেছেন!"

রাসূল সা: এর সীরাতের বড় বই পড়তে যাদের ধৈর্য নেই, তারা অন্তত এই বইটা দিয়ে সীরাত পড়া শুরু করতে পারেন।

বই রিভিউ - আরিফুল ইসলাম

Comments

Popular posts from this blog

মেমোরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | মেমোরির সাতকাহন

বই রিভিউ | আফ্রিকী দুলহান